রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৯৯ সালের আগস্ট সিনেটের প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খান। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে সরিয়ে . ফাইসুল ইসলাম ফারুকীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বি.এন.পি’র দেখানো পথেই চলছে আওয়ামীলীগ। এম সাইদুর রহমান খারে পর আর সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ হয়নি।  

প্রায় ২২ বছর ধরে নির্বাচন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসছে। ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট নির্বাচিত প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগের কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই। ছাত্র প্রতিনিধি (রাকসু) নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটও পূর্ণাঙ্গ নয়।

ভিসি প্যানেল নির্বাচন না হওয়ায় উপাচার্য নিয়োগে এখন তদবির একমাত্র যোগ্যতা হয়ে উঠেছে। ফলে যেসব শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তারা নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভেবে পরিচালনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের ওপর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ১১ () ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত ওই তিন জনের এক জনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি এক জনকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন।  

কিন্তু ২০০১ সালের পর থেকে উপাচার্য নিয়োগের এই ধারা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অধ্যাপক ফাইসুল ইসলাম ফারুকী, অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আব্দুস সোবহান অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন উপাচার্যের দায়িত্ব পান। তারা সবাই রাষ্ট্রপতি মনোনীত উপাচার্য। সর্বশেষ অধ্যাপক আব্দুস সোবহান গত মে উপাচার্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষ করেন।

আবার ১১ () ধারায় বলা আছে, যদি অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্য পদ খালি হয়, তা পূরণে রাষ্ট্রপতি (যা ভালো মনে করবেন) ব্যবস্থা নেবেন।

 

প্রশ্ন আছে প্রশাসনিক বৈধতার:

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, পাঁচ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, চ্যান্সেলর মনোনীত পাঁচ জন শিক্ষাবিদ, সরকার মনোনীত পাঁচ জন সরকারি কর্মকর্তা, স্পিকার মনোনীত পাঁচ জন সংসদ সদস্য, পাঁচ জন অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, পাঁচ জন নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি পাঁচ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিসহ ১০৫ জন সদস্য নিয়ে সিনেট গঠিত।

২০০১ সালের ১২ নভেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খানকে অব্যাহতির পর দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।  

দীর্ঘ ১৪ বছর পর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের মেয়াদে ২০১৫ সালের ১৮ মে সিনেট অধিবেশন বসে। একই প্রশাসনের আমলে ২০১৬ সালের ১৯ মে দ্বিতীয় দফায় সিনেট অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনগুলোতে বার্ষিক বাজেট প্রস্তাব, সিন্ডিকেটে পাশ করা আইন অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ের এজেন্ডা থাকলেও উপাচার্য নির্বাচনের কোনো এজেন্ডা ছিল না।

২০১৭ সালের মে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক আবদুস সোবহান। তার আমলে সিনেটের কোনো অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা ডাকবেন, যা বার্ষিক সভা হিসেবে অভিহিত হবে।

তবে সকল আইন পাশ কাটিয়ে, নির্বাহ ক্ষমতায় চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। ২২ বছর থেকে সিনেট প্যানেল থেকে ভিসি নির্বাচন না হওয়াটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবনতির করণ বলে মনে করছেন জেষ্ঠ অধ্যাপকগণ। তাঁরা আরো মনে করেন, সিনেটের যে বিষয়গুলো আলোচনা হওয়া দরকার সেসব নিয়ে প্রশাসনের কোনো অস্বস্তি আছে বলেই সভা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনগুলো করা হয়েছে যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকমতো চলে। সেগুলোকে উপেক্ষা করা বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার কোনো সুস্থ সংস্কৃতি নয়। নানা রাজনৈতিক কারণে সিনেটকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। উপাচার্যদের কার্যক্রমের অনেক সময় সমালোচনা হয়। তাই সিনেট করে কেউ সমালোচিত বা প্যানেল করে হারতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো উপাচার্য যদি মনে করেন তাহলে যেকোনো সময় এটি কার্যকর করা সম্ভব।

প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক . হাবিবুর রহমান সিনেটের মাধ্যমে প্যানেল নির্বাচন করতে না পারাটাকে তাদের ব্যর্থতা বলে মনে করেন।