আজকের পোস্ট টা ফুড ব্লগিং নিয়ে। ইদানীং যেই হারে খাবার নিয়ে মানুষ ব্লগিং করছে তাতে এক সময় অনার্স আর মাস্টার্স এর সিলেবাসে " ফুড ব্লগিং " নামে একটা অধ্যায় হলে মন্দ হয় না কিন্তু! বইয়ের পাতায়, অধ্যয়ে যখন যুক্ত হবে তখন আমরা ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো কিছু শিখবো নিশ্চয়ই। শট কোর্স ও চালু করা যেতে পারে এই যেমন :"৩ মাসে শেখানো হয় কিভাবে ফুড ব্লগিং করা যায়"!!! অন্তত ভালো খাবার নিয়ে ত ব্লগিং হবে! তাই না!
ইদানীং কার শিশুর অতিরিক্ত ওজন, অল্প বয়সে ডায়েবেটিস, কোলেস্টেরল লেভেল হাই, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস এর অন্যতম একটি কারন এই ফুড ব্লগিং ও পরিবারের উদাসীনতা! না এই তথ্য গবেষণা করে পাইনি। চেম্বারে আসা রোগী ও আশে পাশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো কে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে খাবারের পেইড রিভিউ দেখে বেশিরভাগ বাড়ন্ত বয়সী কিশোর কিশোরী রা ঝুঁকছে সেই প্লেটারের দিকে! এতে করে স্বাস্থ্যের অবনতি ত হচ্ছেই। পাশাপাশি ভালো খাবার ও খাদ্যভাস থেকে সরে যাচ্ছে এই জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ গুলো!! বিভিন্ন এপসের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করে খুব সহজে খাবার দরজায় চলে আসা টাকে আমি যেমন এই দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন হিসেবে দেখি। পাশাপাশি এটাও চোখে ভাসে এই শিশু গুলো যদি এভাবেই বার্গার, পিজ্জা তে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে ভবিষ্যৎ এ আর মাদকাসক্তি নিয়ে চিন্তার দরকার নাই ফাস্টফুড আসক্তি ই এক সময় কপালে চিন্তার ভাজ ফেলবে!!
এখন কি হোটেল সব খাবার বিজনেস বন্ধ করবে? না তা কি করে হয়! সেই নিয়ে কথা বলছি না। কেউ যদি মাসে ১ বার ২ বার এমন খাবার খেতে চায়,রয়ে সয়ে খায় তবে তাতে খুব ক্ষতি নাই। কিন্তু এইভাবে প্রতি সপ্তাহে গিয়ে খাওয়া এবং চেকিং দেয়ার কারনে এক সময় মারাত্মক অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পরিবার কে হিমশিম খেতে হবে।
দেশ থেকে দেশান্তরে কত নাম না জানা খাবার ও রেসিপি তুলে আনছেন ভিডিও করে অনেকে! এতে করে আমরাও জানতে পারছি কত শত দেশীয় খাবার এর নাম ও রেসিপি। জানতে পারছি এই দেশের খাবার নিয়ে অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে । আর কেউ কেউ ফুড নামের কিছু অখাদ্য কে টাকার বিনিময়ে প্রমোট করছে যেখানে খাবার তৈরিতে নাই সু স্বাস্থ্য ও নিয়মেত তোয়াক্কা। ফুড সেফটি মেনে বানাচ্ছে না খাবার। কিন্তু ফুড ব্লগিং এগুলা উঠে আসে না, আসে শুধু দাম আর টেস্ট! ব্যস
বাড়ন্ত শিশু আছে যেই পরিবারে তাদের প্রতি অনুরোধ রইল আপনার শিশুকে ছোট থেকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন! তাকে বুঝতে দিন চাইলেই টাকা সহজে পাওয়া যায় না। এই দেশের অনেক দরিদ্র শিশু রাস্তায় না খেয়ে থাকে চলো আমরা নিজেরা রেস্টুরেন্ট এ না খেয়ে ওই টাকা দিয়ে এই পথ শিশুদের খাওয়াই। এভাবে তার ভেতরে থাকা সুপ্ত মানবিক গুণাবলী কে জাগ্রত করুন। পরিবার থেকেই শিশু শিখে। তাই শেখার প্রথম ধাপ গুলো তে যদি পরিবারের মানুষ সহযোগিতা না করেন তবে সুস্থ একটা প্রজন্ম এক সময় স্বপ্ন মনে হবে! কিছু কিছু রোগ আছে না? ধীরে ধীরে ছড়ায়? আমরা বুঝার আগেই লাস্ট স্টেজে? অনেক দেরি হয়ে যাবে যদি এখন ই আমরা সচেতন না হই।
মাসে একদিন সবাই মিলে খেতে যান আনন্দ করে। কি খাচ্ছেন ভালো খারাপ গল্পের ছলে বলে ফেলুন। শিশুদের যুক্তি গুলো খুব নিরেট হয় কোন খাদ থাকে না। দেখবেন ওরাই আগে বুঝে নিবে যে এটা খারাপ আর এটা ভালো। একটা সুস্থ শিশু একটা সুস্থ জাতির কর্নধার। আর সেই শিশুকে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে যে পরিবেশ দেয়া প্রয়োজন তা কেবল আমরাই দিতে পারি। আমাদের একটু সচেতনতা ও ইচ্ছাই পারে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে!
শিশুরা ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন নিয়ে ব্লগিং করুক, সেই খাবার গুলো সংগ্রহ করুক, নিজেরা খাবে ও দুস্থ শিশুদের খাওয়াবে এমন একটা সুন্দর ব্লগ আর ভ্লগ যাই বলুন না কেনো! এই স্বপ্ন ত দেখাই যায়!
শুরু টা হতে হবে তাই শুরু থেকেই। একদম গোড়া থেকে নয়ত অভ্যাসের ডাল পালা একবার গজিয়ে গেলে সেখান থেকে সঠিক অভ্যাসে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে দেখবেন শেকড় বহুদুর ছড়িয়ে আছে!!!
©নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী